নভেম্বর-ডিসেম্বরে শৈত প্রবাহে বড় ধাক্কা খায় খুলনার বোরোর বীজতলা। ফেব্রুয়ারীর প্রথম থেকেই দিনে গরম আর রাতে ঠা-া অনুভব হয়। জানুয়ারী থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত ঘন কুয়াশা পড়ছে প্রকৃতিতে। বোরো ক্ষেতে সবুজের সমারোহ থাকলেও দিনের গরম আর রাতের ঠা-ায় ব্লাস্টের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ২০২২ সালে তেরোখাদা ও ডুমুরিয়ায় ব্লাস্টে বোরো ধানের বড় ক্ষতির মুখোমুখি হয় কৃষক।
নভেম্বরের অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় ডুমুরিয়া, তেরোখাদা ও পাইকগাছায় আমন ধানের বড় ক্ষতি হয়। শেষ মুহুর্তে কৃষক এ ক্ষতির সামাল দিতে পারেনি। ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে করোনার কারণে খুলনা জেলার বোরো চাষী ন্যায্য দাম পায়নি। প্রতি বস্তা ধান ৯০০-১১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। গত বছর কৃষক ভালো দাম পায়। গেল বোরো মৌসূমে লবণচরা, দৌলতপুর, ফুলতলা, বটিয়াঘাটা, দিঘলিয়া, ডুমুরিয়া, তেরোখাদা, দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায় ৬৪ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। উৎপাদন হয় ২লাখ ৯৮হাজার ৭৬০ মেট্রিকটন চাল। এবারের উল্লিখিত উপজেলাগুলোতে ৬৫হাজার ৫৩৬ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ৩ লাখ ৩ হাজার ২০০ মেট্রিকটন চাল।
বোরো রোপনের পর ফেব্রুয়ারীর প্রথম দিকে এক দফা বৃষ্টি হয়। আবাদ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে সেচ ব্যবস্থা অব্যহত রাখতে হচ্ছে। দাকোপের চুনকুড়ি, পানখালী, তেরোখাদার ছাগলাদহ, ইছামতি, নয়া বারাসাতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। কুষি সম্প্রসারণের এক জরিপে উল্লিখিত এলাকাগুলো লবন্ক্তাতাকে অধিক ক্ষতিকর বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। জেলার ৭ উপজেলায় লবণ সহিষ্ণু বিরি ৬৭, ৮৮, ৯৯, ১০৫, এস এল ৮ ময়না, সুর্বণা, সিনজেনটা ১২০৩, হিরা ১,২,১৯, ও বীনা ২৫ জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবারের জেলায় আবাদকৃত জমির মধ্যে ৬০ শতাংশই হাইব্রিড জাতের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক(উদ্যান) মো: আব্দুস সামাদের ভাষ্য, বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষেতে সেচের পরিমাণ বেড়েছে। এসময় মাজরা ও বাদামী ঘাস ফড়িংয়ের আক্রমণ দেখা দেয়। কৃষকদের বালাই দমনে আলোর ফাঁদ ও পাচিং পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বোরো মৌসূমের মাঝামাঝি সময়ে রাতে ঠান্ডা ও দিনে গরমের কারণে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। চাষীদের এ রোগ প্রতিরোধে নটিভো ও ট্রপর নামক কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ব্লাস্ট দেখা দিলে ধানের ক্ষতি হবে।
অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) সুবির কুমার বিশ্বাস বলেছেন, মার্চের মাঝামাঝি থেকে ইউরিয়া ও এমওপির ব্যবহার বাড়বে। কোন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে একর প্রতি ২হাজার ৪০০ কেজি ধান উৎপাদন হবে বলে তিনি আশাবাদী। তার দেওয়া তথ্য মতে, ডুমুরিয়া ও তেরোখাদায় আবাদী জমির পরিমাণ বেশি।
অপর একটি সূত্র জানায়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে এক পরীক্ষা নিরীক্ষায় কয়েকটি কীটনাশকে ভেজাল পাওয়া গেছে। বিশ^বিদ্যালয়ের মেকানক্যিাল ইঞ্জিনিয়ারিয় বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জাভেদ হোসাইন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গত ৭ জানুয়ারী কীটনাশকের ভেজালের ফলাফল দিয়েছে। এই সূত্র বলেন, ৯টি কীটনাশকের প্রত্যেকটিতে ভেজাল পাওয়া গেছে। বিশে^র মধ্যে এই বিশ^বিদ্যালয়ের ল্যাব অত্যাধুনিক। ফলে এ পরীক্ষাগারের টেস্ট অত্যন্ত নির্ভূল বলে তিনি দাবি করেন।
খুলনা গেজেট/কাজী মোতাহার রহমান/এমএম